পাকিস্তানের জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) এবার শুধুই ক্রিকেট নয়, হয়ে উঠেছে মানবতার একটি প্ল্যাটফর্মও। বিশেষ করে মুলতান সুলতানস দলের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে ক্রীড়ামোদীদের মাঝে। এবারের পিএসএলে মুলতান সুলতানস দল ঘোষণা করেছে—তাদের প্রতিটি ছক্কা ও প্রতিটি উইকেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে ফিলিস্তিনের শিশুদের জন্য তহবিল।

মুলতান সুলতানসের মালিক আলী খান তারিন এক ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমরা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পিএসএলের প্রতিটি ম্যাচে আমাদের ব্যাটসম্যানরা যখন ছক্কা মারবেন, তখন ফিলিস্তিনের তহবিলে এক লাখ পাকিস্তানি রুপি করে যাবে। আমাদের বোলাররাও এ উদ্যোগে শরিক হতে চেয়েছে। তাই তাদের প্রতিটি উইকেটেও এক লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। এই অর্থ মূলত গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুদের সাহায্যের জন্য ব্যবহার করা হবে।

আলীর এই মানবিক পদক্ষেপে মুলতান দলের খেলোয়াড়রাও বেশ উৎসাহী। করাচি কিংসের বিপক্ষে পিএসএলের নিজেদের প্রথম ম্যাচে টস করতে নামা অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানও এই উদ্যোগের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই, আমাদের প্রতিটি চার, ছক্কা এবং উইকেট ফিলিস্তিনের গাজার শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে সাহায্য করুক। এটা শুধু খেলা নয়, আমাদের একটি মানবিক দায়িত্ব।”

মুলতান সুলতানসের এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়, যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা আবারও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটিয়ে নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এরপর থেকে ইসরায়েলি আক্রমণে অন্তত ৫০০ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এই কঠিন সময়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ক্রিকেটের মতো একটি জনপ্রিয় মঞ্চ থেকে মুলতান সুলতানসের এমন ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

পিএসএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুলতান সুলতানস খেলেছে করাচি কিংসের বিপক্ষে। ব্যাট হাতে দারুণ শুরু করে দলটি প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৩৪ রান। বিশাল এই ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা মেরেছেন ৮টি ছক্কা ও ২৩টি চার। অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান একাই করেছেন ৫টি ছক্কা ও ৯টি চার। ৬৩ বলে তার করা ১০৫ রানের ইনিংসটি ছিল নিখুঁত ব্যাটিং নৈপুণ্যের উদাহরণ।

প্রতি ছক্কায় ও প্রতি উইকেটে ফিলিস্তিন শিশুদের জন্য ১ লাখ রুপি

যদিও মুলতান দল ম্যাচটি জিততে পারেনি, তবুও ম্যাচ শেষে তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয়, প্রথম ম্যাচেই গাজার শিশুদের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ লাখ পাকিস্তানি রুপি। ম্যাচে ৮টি ছক্কা ও ৭টি উইকেট মিলিয়ে এই তহবিল তৈরি হয়েছে।

পিএসএলে এবার মুলতান সুলতানস আরও অন্তত ৯টি ম্যাচ খেলবে। প্রতিটি ম্যাচেই ছক্কা ও উইকেট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিলিস্তিনের জন্য তহবিলও বাড়বে। এমন মানবিক পদক্ষেপ ক্রীড়াজগতের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য হচ্ছে। খেলার মাঠ থেকে সরাসরি মানবতার ডাকে সাড়া দেওয়ার এই চিত্র শুধু সমর্থকদের মন জয় করেনি, বরং বৈশ্বিক মহলেও প্রশংসিত হয়েছে।

আগামী ১৬ এপ্রিল মুলতান সুলতানসের পরবর্তী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের বিপক্ষে। সমর্থকরা যেমন তাদের দলের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে আছেন, তেমনি অনেকে অপেক্ষায় আছেন—এই ম্যাচে কত ছক্কা ও উইকেট থেকে নতুন করে ফিলিস্তিনের শিশুদের সাহায্যে তহবিল যোগ হবে।

মুলতান সুলতানস দেখিয়ে দিয়েছে—ক্রিকেট শুধু মাঠে খেলা নয়, বরং এর প্রভাব মাঠের বাইরেও সমাজে ছড়িয়ে দিতে পারে একটি শক্তিশালী বার্তা। এই বার্তা যেন পৌঁছে যায় বিশ্বজুড়ে—খেলার মাধ্যমে মানবতার সেবা সম্ভব।

Leave a Comment