যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, সেমিকন্ডাক্টর, মেমোরি কার্ড ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিপণ্যকে চীনা আমদানির ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের আওতা থেকে বাদ দিয়েছে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাদের অধিকাংশ পণ্য চীনেই তৈরি হয়।

এর আগে এসব পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, যা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারত কয়েকগুণ। তবে ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার পেট্রোলের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব প্রযুক্তিপণ্য ট্রাম্প ঘোষিত সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ শুল্ক ও চীনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক—উভয়ের বাইরে থাকবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি ট্রাম্প প্রশাসনের চীনা শুল্ক নীতিতে প্রথম বড় ধরনের ছাড়। ড্যান আইভস, ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের প্রযুক্তি গবেষণার প্রধান, একে “গেম-চেঞ্জার” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “স্মার্টফোন ও চিপের মতো পণ্যে শুল্ক ছাড় প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বপ্নের মতো।”

অ্যাপল, এনভিডিয়া, মাইক্রোসফটসহ অন্যান্য বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি পেয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আনার জন্য কোম্পানিগুলোকে সময় দিতেই এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাত যেন চীনের ওপর নির্ভরশীল না হয়।” তিনি আরও জানান, ট্রাম্পের নির্দেশে কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই দেশেই উৎপাদন শুরুর উদ্যোগ নিচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমরা অনেক অর্থ উপার্জন করছি, দেশ হিসেবে লাভবান হচ্ছি।” তবে তিনি স্পষ্ট করেন, এখনও কিছু ইলেকট্রনিক পণ্য ফেন্টানিল সংক্রান্ত ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় রয়ে গেছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যদি শুল্কের খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপানো হতো, তাহলে আইফোনের দাম তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া অ্যাপলের ৮০ শতাংশ আইফোন তৈরি হয় চীনে, আর ২০ শতাংশ ভারতে।

চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে অ্যাপল, স্যামসাংসহ বড় কোম্পানিগুলো সম্প্রতি সরবরাহ চেইনে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। ভারত ও ভিয়েতনাম এখন নতুন উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে এগিয়ে আসছে।

এদিকে, চীন ছাড়া অন্যান্য দেশের ওপর শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্প জানান, যারা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেনি, তারা আপাতত শুধু ১০ শতাংশ শুল্ক দেবে।

হোয়াইট হাউস জানায়, এই শুল্ক নীতি মূলত বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও ভালো সুবিধা নিশ্চিত করতে নেওয়া একটি কৌশল। ট্রাম্প বলেন, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কারখানা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ‘অন্যায্যতা’ দূর করতে সহায়তা করবে।

Leave a Comment